ইতিহাস একটি জাতীর জীবনের ধারাবাহিক চল চিত্র এবং সভ্যতার স্মারক। মৌন অতীতকে সে মানুষের কাছে ব্যাঙ্গময় করে তোলে নির্মল নিরোপেক্ষতায়। ইতিহাস তায় গর্ব গৌরব ও কলংক এক সুত্রে গেথে প্রকাসের দায়িক্ত গ্রহণ করে। আর এই ইতিহাসের সড়ক বেয়েই মানুষের চিরকালের যাওয়া আসা। প্রবাহমান জীবনাশ্রু এমনি কেও বয়ে চলে কাল থেকে কালানত্মরে। ইতিহাসের এমনি এক ধূসর পথে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার সীমানেত্মর কোল ঘেঁসে জরা জীর্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে ভাটপাড়া নীল কুঠি বাড়ি। মেহরেপুর অঞ্চলে ১৭৭৮ সালে ক্যারল ব্লুম নামক একজন ইংরেজ সর্ব প্রথম নীল কুঠি স্থাপন করেন। নীলচাষ অত্যাধিক লাভ জনক হওয়ায় ১৮৭৬ সালের দিকে তৎকালীন নদীয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমায় নীলচাষ শুরু হয়। এ সময় বিখ্যাত গ্রী -দস্যু নেতা রঘুনাথ ভোসালীদের সঙ্গে সম্মুখ স্মমরে গোয়ালা চৌধুরী নিহত হলে মেহেরপুর রানী ভবীনর জমিদার ভুক্ত হয়। পরে রানী ভবানীর হাত থেকে মেহেরপুর কাশিম বাজার হরিণাথ কুমার নন্দি ক্রয় করেন। হরিণাথ নন্দি ইতিহাসে কুখ্যাত জেমস হীলেন কাছে মেহেরপুরকে ইজারা দেন। কিন্তু জমিদার মথুরা নাথ মুখার্জী নীলকর জেমস হীলের নীলচাষ বন্ধ করে দেবার প্রচেস্টা চালান। ফলে জেমস হীলের সাথে তার বিবাধ বাধে। যার ফলে মথুরা নাথ জেমস হীলকে মেহেরপুরের কর্তৃত্ব নিতে দেননি। তার পুত্র চন্দ্র মহন বৃহৎ অংকের নজরানা নিয়ে মেহেরপুরকে জেমস হীরের হাতে তুলে দেন। চন্দ্র মহনের পুত্র মহেষ মুখোপাধ্যায় জেমস হীলের মন্ত্রী নিযুক্ত হয়ে ছিলেন। তিনিই নীল দর্পন নাটকে গুপে দেওয়ান নামে ইতিহাসে খ্যাত হয়ে ছিলেন। ১৮১৮থেকে ১৮২০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মেহেরপুরে বেশ কয়েকটি স্থানে নীল পুঠি স্থাপিত হয়ে ছিল তার মধ্যে ভাটপাড়া নীল কুঠি অন্যতম ও উল্লেখ্য। নীল চাষ সমপর্কে জানা গেছে, নীলগাছ দেখতে কিছুটা ভাং বা গাজা গাছের মতো। এই গাছ গুলো সাধারনত ৪-৫ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। বছরে ২ বার নীল চাষ করা হতো। বৈশাখ-জৈষ্ঠ ও আশ্বীন-কার্তিক মাসে নীল গাছ কেটে আটি বেঁধে শ্বান বাধানো পুকুরে জাগ বা পঁচানো হতো। সেই পচানো পানি জ্বালিয়ে নীল রং তৈরী করা হতো। ১ বিঘা জমিতে আড়ায় থেকে ৩ সের নীল উৎপন্ন হতো। এই তিন সের নীল উৎপাদন করতে খরচ হতো মাত্র ১০ থেকে ১২ টাকা। আর চাষিরা পেত মাত্র ৩ টাকা। এ ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে কোন চাষি প্রতিবাদ করলে তাদের খুন করে লাশ গুম করা হতো। নীলকরদের বিচিত্র ধরনের নির্যাতনের চিত্র সব জায়গাতে প্রায় একইরূপ ছিল। ভাটপাড়া নীলকুঠিতে নীলগাছ আজও আগাছার ন্যায় ছড়িয়ে জন্মায়। আগাছা নীল গাছ দেখে অতীতের সেই নীল চাষিদের ওপর হৃদয় বিদারক নির্যাতনের কথা আজও স্মরন করিয়ে চমকিয়ে তোলে। নীল গাছ থেকে যে রং তৈরী করা হতো তা ছিল চাষিদের বুকের পুঞ্জিভুত রক্ত। থম থমে বিরাজমান ভগ্ন জরাজীর্ন ভাটপাড়া নীল কুঠির পাশে এসে দাঁড়ালে মনে হয় রক্তে রঞ্জিত চাষিরা করুন ভাবে আত্ন্য চিৎকার করছে। বছরের প্রতি দিনই দুর দুরানত্ম থেকে ইতিহাস প্রিয় মানুষ এখানে আসে পিকনিক করতে। ধ্বংস প্রায় এই নীলকুঠিটি ইট, চুন-শুরকি দ্বারা নির্মাণ করা হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস